BN/Prabhupada 0583 - সবকিছুই ভগবদগীতায় আছে



Lecture on BG 2.21-22 -- London, August 26, 1973

সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভগবানের সহায়তায় চালিত হচ্ছে । সবচেয়ে শক্তিশালী সাহায্যকারী ব্রহ্মার অনুযায়ী তেনে ব্রহ্মহৃদা য আদি কবয়ে মুহ্যন্তি যৎ আদি সূরয় (ভাগবত ১/১/১) ব্রহ্মার হৃদয়েও, তেনে ব্রহ্মহৃদা, হৃদা, আবারও হৃদা। কারণ ব্রহ্মা তখন একা ছিলেন, তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিলেন কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নির্দেশ দিলেন, "তুমি এইভাবে ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি কর'। বুদ্ধিযোগম্‌ দদামি তং "আমি বুদ্ধি দান করি" তাই সবকিছুই আছে। সবকিছুই আছে। কৃষ্ণও সর্বদা তোমার সঙ্গে আছেন যদি তুমি ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে চাও, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে উপদেশ দিতে প্রস্তুত । "হ্যাঁ, যেন মাম্‌ উপযান্তি তে" (১০/১০)। তিনি উপদেশ দেন। "হ্যাঁ, তুমি এইভাবে কর। তাহলে তুমি তোমার সমস্ত জড় বাসনা , জাগতিক কাজকর্ম থেকে মুক্ত হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে" কিন্তু যদি তুমি তোমার জড় অস্তিত্ব বজায় রাখতে চাও, তাহলে বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় (গীতা ২/২২) তোমাকে একটি দেহ ধারণ করতে হবে এবং যখন সেটি অকেজো হয়ে যাবে তখন তোমাকে এই দেহ ছেড়ে আরেকটি দেহ নিতে হবে, এই হল জাগতিক অস্তিত্বের চলমানতা। কিন্তু যদি তুমি শেষ করতে চাও, যদি তুমি প্রকৃতই এইসব কাজের দ্বারা ক্লান্ত হয়ে গিয়ে থাকো ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (গীতা ৮/১৯) , বারবার জন্ম নাও, আবার মর, আবার জন্মাও কিন্তু এতোটাই নির্লজ্জ এবং জঘন্য যে আমরা বারংবার এই কাজ করেও এর থেকে বিরক্ত হচ্ছি না আমরা এটাই চালিয়ে যেতে চাই, তাই কৃষ্ণ বলছেন, "ঠিক আছে, চালিয়ে যাও"। এই কথা ভগবদগীতায় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া।

ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌
হৃদদেশে অর্জুন তিষ্ঠতি
ভ্রাময়ন্‌ সর্ব ভূতানি
যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া
(গীতা ১৮.৬১)

খুবই স্পষ্ট। কৃষ্ণ তোমার বাসনা জানেন। যদি তুমি এই জগতকে ভোগ করতে চাও, "ঠিক আছে, ভোগ কর"। তাই বিভিন্ন ধরণের ভোগ করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রের দরকার তাই কৃষ্ণ দয়া করে তোমার জন্য তা তৈরি করে দিচ্ছেন, "ঠিক আছে"। ঠিক যেমন বাবা ছেলেকে একটি খেলনা দিচ্ছেন যখন ছেলে মোটরগাড়ি চাইছে "ঠিক আছে, নাও তোমার মোটরগাড়ি" সে একটি ইঞ্জিন চায়। রেলওয়েঢ় লোক হতে চায়। এইসব খেলনা আগে ছিল। তেমনই শ্রীকৃষ্ণ এইসব খেলনার মতো দেহ দিচ্ছেন যন্ত্র। মেশিন। এটি একটি যন্ত্র। সবাই বোঝে যে এটি একটি যন্ত্র। কিন্তু এই যন্ত্রটি কে দিয়েছেন? এই যন্ত্রটি প্রকৃতির দ্বারা দেয়া। জাগতিক উপাদানে কিন্তু তা শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে নির্মিত ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতি সূয়তে স চরাচরম্‌ (গীতা ৯/১০) "আমার অধ্যক্ষতায় প্রকৃতি এই সব কিছু তৈরি করছে"

তাই কৃষ্ণভাবনামৃত বুঝতে এমন কি সমস্যা আছে? সবকিছুই ভগবদগীতায় দেওয়া হয়েছে যদি তোমরা নিষ্ঠাসহকারে পড়তে এবং বুঝতে চেষ্টা কর, তাহলে তুমি সবসময় কৃষ্ণভাবনাময় থাকতে পারবে সবকিছুই এখানে আছে। আমার অবস্থানটি কি, আমি কীভাবে কাজ করছি, আমি কীভাবে মৃত্যুবরণ করছি, আমি কীভাবে বৃদ্ধ হচ্ছি, আমি কীভাবে নতুন দেহ পাচ্ছি, আমি কীভাবে দেহান্তর করছি সবকিছুর বিবরণ আছে এখানে। একজন ব্যক্তিকে কেবল একটু বুদ্ধিমান হতে হবে কিন্তু আমরা বুদ্ধিহীন, মূর্খ থেকেই গেলাম কারণ আমরা বুদ্ধিহীন মূর্খদের সঙ্গ করছি এইসব মূর্খ বদমাশ দার্শনিক, ধর্মবিদ্‌, অবতার, ভগবান, স্বামী, যোগী, কর্মীদের সাথে তাই আমরাও মূর্খ হয়ে গেছি। সৎ সঙ্গ ছাড়ি কৈনু অসতে বিলাস তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর অনুশোচনা করেছেন, "আমি ভক্তসঙ্গ ত্যাগ করেছি। আমি শুধু এইসব অসৎ মূর্খদের সঙ্গ করছি।" অসৎ, অসৎ সঙ্গ। তে কারণে লাগিল যে কর্মবন্ধ ফাঁস। "অতএব, আমি এই জন্ম মৃত্যুর বন্ধনের ফাঁসে আটকে গেলাম। তে কারণে। তাই এসব ত্যাগ কর। চাণক্য পণ্ডিত বলেছেন। "ত্যাজ দুর্জন সংসর্গম্‌, অসৎ লোকের সঙ্গ ত্যাগ কর, ভজ সাধু সমাগমম্‌, "কেবল সাধু ব্যক্তির সঙ্গ কর।" সেটি হবে ঠিক। আমরা আমাদের বিভিন্ন কেন্দ্র খুলছি ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য নয়, বরং ভক্তদের সৎ সঙ্গ পাওয়ার জন্য যদি আমরা সেটি হারাই, যারা এই সংস্থার ম্যানেজার আছে তাঁদের অবশ্যই জানা উচিৎ যে আমরা এই সংস্থা বা কেন্দ্রগুলি কোন বেশ্যাখানা বানাতে পারি না। এমন কোন ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে যেন আমরা সবসময় আমাদের উন্নতির জন্য সৎসঙ্গে থাকতে পারি। সেটিই চাই।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।