BN/Prabhupada 0689 - যদি তুমি দিব্য সঙ্গে থাকো, তাহলে তোমার চেতনাও দিব্য হবে



Lecture on BG 6.35-45 -- Los Angeles, February 20, 1969

ভক্তঃ তিনি পূর্ব জন্মের অভ্যাসবশে স্বাভাবিকভাবেই যোগ সাধনের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্রের জিজ্ঞাসু পুরুষ বেদোক্ত সকাম কর্মের মার্গকে অতিক্রম করেন (গীতা ৬/৪৪) শ্রীল

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

ভক্তঃ "কিন্তু যখন যোগী..."

শ্রীল প্রভুপাদঃ না, আমাকে এটা আগে বলতে দাও। "দিব্য চেতনার কারণে।" আমরা এই কৃষ্ণচেতনা বা দিব্য চেতনাকে প্রস্তুত করছি । এবং সেই চেতনা চলে যাবে/ ঠিক যেমন ফুলের ঘ্রাণ বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে এবং আমরাও সেই গোলাপের সৌরভ পাই। তদ্রূপ, আমাদের মৃত্যুর সময় এই দেহের বিনাশ হয়। "মরলে সবকিছুই মাটির সাথে মিশে যাবে।" এই দেহ পাঁচটি উপাদানে গঠিত , মাটি, জল, আগুন, বায়ু ও আকাশ জাগতিক উপাদানের সমষ্টি। কেউ এই দেহ পুড়িয়ে দেয়, কেউ বা মাটি চাপা দেয়, আর কেউ বা পশুপাখিদের খাবার হিসেবে তা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মানব সমাজের এই তিন নিয়ম ঠিক যেমন ভারতে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় এই দেহ আসে আর পরে তা ছাইয়ে পরিণত হয়, অর্থাৎ মাটি। ছাই মানে মাটি। যারা তাদের পূর্বপুরুষদের দেহ মাটিচাপা দিচ্ছে সেই দেহও মাটিই হচ্ছে। ঠিক যেমনটা খ্রিষ্টানদের বাইবেল বলছে - মাটির দেহ মাটি হবে। এই দেহটি মাটি এবং শেষে গিয়ে আবার মাটিই হচ্ছে এবং যারা মৃতশরীর ফেলে দিচ্ছে, সেগুলোও পশুপাখি, শকুনে খাচ্ছে যেমন ভারতে পারসী সম্প্রদায় আছে তারা পোড়ায় না, মাটিচাপাও দেয় না। তারা ফেলে দেয়, এবং শকুনেরা তৎক্ষণাৎ এসে খেতে শুরু করে তারপর সেই দেহ ওদের মলে পরিণত হয়।

তাই এই দেহ হয় মাটি, নয় ছাই কিংবা বিষ্ঠায় পরিণত হবে। এই সুন্দর দেহ যা তুমি রোজ সাবান দিয়ে পরিষ্কার করছ তা তিনটির যে কোন একটি অবস্থা - ছাই, মাটি বা বিষ্ঠা। সুক্ষ্ম উপাদান, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার - এই সবকিছুকে এক সঙ্গে কৃষ্ণভাবনামৃত বলা হয় সেই আত্মা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু তোমাকে নিয়ে যাবে। মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার সেই সূক্ষ্ম শরীরকে নিয়ে যাবে। এবং ... ঠিক ফুলের মতো। যেমন তুমি গোলাপের সৌরভ উপভোগ কর, "ওহ্‌ দারুন ঘ্রাণ তো"। কিন্তু যখন বাজে গন্ধ, কোন নোংরা মল বা বাজে জায়গার ওপর দিয়ে যায়, তখন তুমি বল, "ওহ্‌ কি বাজে গন্ধ"। সুতরাং এই চেতনা হয় তোমাকে বিষ্ঠা গন্ধের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে নয়তো গোলাপ ঘ্রাণের মধ্যে দিয়ে। তোমার কাজ অনুযায়ী , চেতনা অনুযায়ী। তাই যদি তুমি তোমার চেতনাকে কৃষ্ণ ভাবনাময় প্রশিক্ষিত কর, তাহলে তুমি শ্রীকৃষ্ণের কাছে যাবে। এটা বোঝা খুব কঠিন কিছু নয়। তুমি বাতাসকে দেখতে পাবে না, কিন্তু গন্ধের মাধ্যমে অনুভব করতে পারবে, "ওহ্‌ এই রকম একটা ঘ্রাণ যাচ্ছে।" ঠিক তেমনই ভিন্ন ভিন্ন এই সব দেহ বিভিন্ন সব চেতনার কারণে গঠিত।

তাই যদি তুমি তোমার চেতনাকে এই যোগ পন্থার মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত কর তাহলে তুমি এই ধরণের দেহ পাবে ভাল সুযোগ পাবে, ভাল পিতামাতা, ভাল পরিবার, যেখানে তুমি এই যোগাভ্যাস করতে পারবে এবং স্বাভাবিকভাবেই তোমার পূর্বজন্মের অসম্পূর্ণ চেতনার কাজটি সমাপ্ত করার আবারো সুযোগ পাবে সেই কথাটিই এখানে বলা হচ্ছে। পূর্বজন্মের উন্নত চেতনার অভ্যাসবশত। তাই বর্তমানে আমাদের কাজ হচ্ছে কীভাবে চেতনাকে চিন্ময় করা যায়। সেটিই আমাদের একমাত্র কাজ। যদি তুমি চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হয়ে ভগবানের কাছে ফিরে যেতে চাও সচ্চিদানন্দময় জীবন পেতে চাও তাহলে আমাদের চেতনাকে কৃষ্ণচেতনাময় করতে হবে সেটি সঙ্গের দ্বারা খুব সহজেই করতে পারবে। সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামাঃ। যদি তুমি দিব্য সাধু সঙ্গে থাকো, তাহলে তোমার চেতনাও দিব্য হবে। আর যদি তুমি নারকীয় বা আসুরিক সঙ্গ রাখো তাহলে তোমার চেতনাও সেইভাবেই গড়ে উঠবে। তাই আমাদের উচিত চেতনাকে উন্নত করার প্রশিক্ষণ দেয়া। সেটিই হচ্ছে এই মনুষ্য জীবনের কর্তব্য। যদি আমরা আমাদের চেতনাকে দিব্য করি তবে পরবর্তী দিব্য জীবনের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে মনুষ্য জীবনটি হচ্ছে সুযোগ যে কীভাবে পরবর্তী জীবনকে চিন্ময় করা যায় সম্পূর্ণ দিব্য চেতনা মানে সচ্চিদানন্দময় চেতনা স্বাভাবিকভাবেই দিব্য সঙ্গের মাধ্যমে সেই রকম লোকদের সাথেই তুমি যোগাযোগ করবে যারা নিজেরাও দিব্য চেতনা অনুশীলন করছে এই কথাটিই এই শ্লোকে বলা হয়েছে। পড়ো।