BN/Prabhupada 1064 - পরমেশ্বর ভগবান সকল জীবের হৃদ্দেশে অবস্থান করেন



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

পরমেশ্বর ভগবান সকল জীবের হৃদ্দেশে অবস্থান করেন পরম চেতনা, যা ভগবদ্গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যে অধ্যায়ে ঈশ্বর ও জীবের পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ। ক্ষেত্রজ্ঞের ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে ভগবানও ক্ষেত্রজ্ঞ অর্থাৎ চেতন, এবং জীবসমূহ, বা জীব তারাও চেতন। কিন্তু পার্থক্য এই যে জীব কেবল তার নিজের দেহটি সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু ভগবান সমস্ত দেহ সম্বন্ধেই সচেতন। ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি। (ভ. গী. ১৮/৬১)

পরমেশ্বর ভগবান সকল জীবের হৃদয়াভ্যন্তরে অবস্থান করেন, যেহেতু তিনি সকলের হৃদয়ে অবস্থান করেন, তাই তিনি সকলের অন্তরতম প্রদেশের কথা জানেন। এই কথা আমাদের ভুললে চলবে না। এই সম্বন্ধে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, পরম পুরুষোত্তম ভগবান পরমাত্মারূপে সর্বজীবের অন্তরে অধিষ্ঠিত, নিয়ন্তা হিসাবে তিনিই তাদের পরিচালনা করেন। তিনি ‍পরিচালনা করেন। সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো (ভ. গী. ১৫/১৫) । সকলের হৃদয়ে অবস্থান করে জীবের বাসনা অনুযায়ী তিনি পরিচালনা করেন। মোহাচ্ছন্ন হয়ে জীব তার কর্তব্যকর্ম ভুলে যায়। প্রথমত তার স্বাধীন ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে সে কোন কিছু করার সংকল্প করে, এবং তারপর সে নিজের কর্মের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সে এক দেহ পরিত্যাগ করে আর এক দেহ ধারণ করে- যেমন আমরা পুরাতন কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন কাপড় পরিধান করি। অনুরূপভাবে, ভগবদ্গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে- বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় (ভ. গী. ২/২২)। যেমন আমরা পুরাতন কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন কাপড় পরি। অনুরূপ ভাবে জীবও ভিন্ন ভিন্ন দেহ পরিবর্তন করে, এভাবে পূর্বকৃত কর্ম ফলস্বরূপ আত্মা এক দেহ থেকে আর এক দেহে দেহান্তরিত হয়। জীব যখন সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হয় তখনই এই কার্যকলাপ পরিবর্তন করা যায়, স্থীর বুদ্ধি, এবং তার কর্ত্তব্য কর্ম সম্পর্কে সচেতন হয়। এবং সেই অনুযায়ী কর্ম করে, তখনই সে তার পূর্বকৃত কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে কর্ম নিত্য নয়। চারটির মধ্যে পাঁচটি তত্ত্ব -ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল এবং কর্ম- চারটি তত্ত্ব নিত্য, কিন্তু কর্ম অনিত্য।

এখন চেতন ঈশ্বর, পরম চেতন ঈশ্বর, পরম চেতন ঈশ্বর বা পরমেশ্বর, এবং জীব এর মধ্যে পার্থক্য এমতাবস্থায় এই রকম। চেতনা, ভগবান এবং জীবের, উভয়ই অপ্রাকৃত। এমন নয় যে জড় বস্তুর সংস্পর্শে আসার ফলে জীবের চেতনার বিকাশ হয়। এই ধারণাটি ভ্রান্ত। কোন বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশে জড়ের মধ্য থেকে চেতনের উদ্ভব হয়। সেই কথা গীতায় স্বীকার করা হয়নি। তারা এইরকম করতে পারে না। জড়া প্রকৃতির প্রভাবে চেতনার বিকৃত প্রতিফলন হতে পারে, এবং তা হচ্ছে রঙিন কাঁচের মাধ্যমে প্রতিফলিত রঙিন আলোকের মতো। কিন্তু পরমেশ্বরের চেতনা জড়া প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবিত বা কলুষিত হয় না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ (ভ. গী. ৯/১০) তিনি যখন এই জড় জগতে অবতরণ করেন, তখন তাঁর চেতনা জড়া প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয় না। তাই যদি হত, তবে তিনি পরম তত্ত্বজ্ঞান সমন্বিত ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করতে পারতেন না। কেউ অপ্রাকৃত জগৎ সম্বন্ধে কিছু ব্যাক্ত করতে পারেন না, জড়া প্রকৃতির কলুষতা থেকে মুক্ত না হয়ে। সুতরাং পরমেশ্বর ভগবান জড়া প্রকৃতির দ্বারা কলুষিত ছিলেন না। কিন্তু আমাদের চেতনা এখন জড়া প্রকৃতির দ্বারা কলুষিত। তাই ভগবদ্গীতার মাধ্যমে ভগবান আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের এই কলুষিত চেতনাকে পবিত্র করতে হবে। সেই কলুষ মুক্ত চেতনা নিয়ে কর্ম করতে হবে। তাহাই আমাদেরকে সুখী করবে। আমরা বন্ধ করতে পারি না। আমরা কর্ম করা বন্ধ করতে পারি না। কর্মকে পবিত্র করতে হবে। এবং এই পবিত্র কর্মেরই নাম ভক্তি। আপাতদৃষ্টিতে ভক্তিকে সাধারণ কর্মের মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলো কলুষিত কর্ম নয়, এগুলো পবিত্র কর্ম। ভগবানের ভক্তকে দেখে একজন মূর্খ লোক মনে করতে পারে যে, তিনি সাধারণ মানুষের মতই কাজ করে চলেছেন, কিন্তু সেটি তার নির্বুদ্ধিতা। সে ভগবদ্ভক্ত এবং পরমেশ্বর ভগবানের কার্য কলাপ বুঝতে পারে না, সে গুলো জড় চেতনাময় বস্তু দ্বারা কলুষিত নয়, সেই সমস্তই ত্রিগুণাতীত। সুতরাং আমাদের জানা উচিত, আমাদের চেতনা এখন জড় কলুষিত।