BN/Prabhupada 1063 - পূর্বকৃত কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের মুক্তি দাও



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

আমাদের পূর্বকৃত কর্ম ফল থেকে মুক্তি দাও ঠিক এই জীবনে যেমন আমরা কর্মের ফল ভোগ করছি। ধরুন, আমি একজন ব্যবসায়ী, এবং আমার বুদ্ধিমত্ত্বা সহকারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি এবং ব্যাঙ্কে অঢেল টাকা পয়সা জমিয়েছি। এখন আমি ভোক্তা। একইভাবে, ধরুন, বিশাল অর্থ দিয়ে আমি আমার ব্যবসা শুরু করেছি , কিন্তু আমি সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি। আমি সমস্ত অর্থ হারালাম। তাই আমি দুর্দশায় ভারাক্রান্ত। এইভাবে, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আমরা ভোগ করি, আমরা আমাদের কর্মের ফল ভোগ করি। একে বলা হয় কর্ম।

তাই এই সমস্ত বিষয়, ইশ্বর, জীব, প্রকৃতি, অথবা ভগবান অথবা জীব, জড়া প্রকৃতি , অবিনাশী কাল ও আমাদের বিভিন্ন কর্ম , এই বিষয়গুলি ভগবত গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে ভগবান, জীব, জড়া প্রকৃতি এবং কাল, এই চারটি শাশ্বত। জড়া প্রকৃতির প্রকাশ ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, কিন্তু এটা মিথ্যা নয়। কতিপয় দার্শনিক বলেন যে জড়া প্রকৃতির প্রকাশ মিথ্যা, কিন্তু ভগবদ গীতা অথবা বৈষ্ণব দর্শন অনুসারে, তারা জড়া প্রকৃতির প্রকাশকে মিথ্যা হিসেবে গ্রহণ করে না। তারা স্বীকার করে যে জড় প্রকাশ বাস্তব, তবে ক্ষণস্থায়ী। এটা আকাশে ভাসমান মেঘের মত এবং বর্ষা শুরু হলে এবং বর্ষা শেষ হলে মাঠে প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি দেখা যায়। বর্ষাকাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে মেঘ অদৃশ্য হয়ে যায়। সাধারণত, ধীরে ধীরে, মাঠের ফসল শুকিয়ে যায় এবং মাঠ আবার অনুর্বর হয়ে যায়। একইভাবে এই জড়া প্রকৃতির প্রকাশ একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে শুরু হয়। ভগবদ্‌গীতার পাতা থেকে আমরা এটা বুঝি ও জানি। ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (ভগবদ গীতা ৮.১৯)| এই জড় প্রকাশ একটা সময় ব্যবধানে চমৎকার ভাবে প্রকাশিত হয় এবং আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এটাই প্রকৃতির কাজ। এই ক্রিয়া শাশ্বত। তাই প্রকৃতিও শাশ্বত। এটা মিথ্যা নয়। যেহেতু ভগবান গ্রহণ করেছেন, মম প্রকৃতি, "আমার প্রকৃতি।" অপরেয়ম্‌ ইতস তু বিধি মে প্রকৃতিং পরাম (ভগবদ গীতা ৭.৫) ভিন্না প্রকৃতি, ভিন্না প্রকৃতি, অপরা প্রকৃতি। জড়া প্রকৃতি ভগবানের ভিন্না শক্তি, এবং জীব সমূহ , তারাও ভগবানের শক্তি, তবে তারা ভিন্ন নয়। তারা শাশ্বত কাল ধরে সম্পর্কিত। তাই ভগবান, জীব, প্রকৃতি, জড়া প্রকৃতি ও শাশ্বত কাল। কিন্তু অন্য বিষয়, কর্ম, শাশ্বত নয়। কর্ম অথবা কর্মের প্রভাব অনেক প্রাচীন হতে পারে। অনাদি কাল ধরে আমরা আমাদের কর্মের ফল ভোগ করছি। তথাপি আমরা আমাদের কর্মের ফল পরিবর্তন করতে পারি। সেটা আমাদের আদর্শ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। নিঃসন্দেহে আমরা বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত আছি, কিন্তু আমরা জানি না কি ধরনের কর্ম আমাদের গ্রহণ করা উচিত যা থেকে আমরা পূর্বকৃত সমস্ত কর্ম ফল থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হতে পারব। সেটাও ভগবদ গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

ঈশ্বর হচ্ছেন পরম চেতন। ঈশ্বর অথবা পরম পুরুষোত্তম হচ্ছেন পরম চেতন। পরমেশ্বর ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার কারণে জীবও চেতন। একটা জীবও চেতন। জীব সমূহ এবং প্রকৃতি বা শক্তি উভয়কে প্রকৃতি হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এই দুটির মধ্যে, একটি প্রকৃতি, জীব হচ্ছে চেতন। অন্য প্রকৃতিটি চেতন নয়। এই হল পার্থক্য। তাই জীব প্রকৃতিকে উৎকৃষ্ট বলা হয় কারণ জীবদের ভগবানের মত চেতনা রয়েছে। ভগবান হলেন পরম চেতন। কারো দাবি করা উচিত নয় যে , জীবও পরম চেতন। না। জীব কোন অবস্থাতেই পরম চেতন হতে পারে না। এটা বিভ্রান্তি মূলক তত্ত্ব। এটা বিভ্রান্তি মূলক তত্ত্ব। কিন্ত জীব চেতন। কিন্ত পরম চেতন নয়।