BN/Prabhupada 1075 - বর্তমান জীবনের কর্মের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরী হচ্ছি



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

বর্তমান জীবনের কর্মের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরী হচ্ছি ভগবান বলেন যে, অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত কলেবরম (ভ.গী. ৮.৫)। পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ করে যিনি এই জড় শরীরটি ত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ চিন্ময় শরীর প্রাপ্ত হন। এই জড় জগতে এক শরীর ত্যাগ ও অন্য শরীর গ্রহণের পদ্ধতি ও সুব্যবস্থিত। পরবর্তী জীবনে কি শরীর পাবে, এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই একজন এই জগতে মৃত্যুবরণ করে। কিন্ত এই সিদ্ধান্ত উচ্চতর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন। এই জীবনে আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের পদোন্নতি বা অধঃপতন হয়। একইভাবে, আমাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আমরা পরবর্তী দেহ প্রাপ্ত হই.... এই জীবনের কৃতকর্ম আমাদের পরবর্তী জীবনের ভিত্তি স্বরূপ। এই জীবনের কৃতকর্মের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী জীবন তৈরী করছি। তাই, আমরা যদি ভগবদ্ধামে প্রত্যাবর্তনের জন্য এই জীবনকে প্রস্তুত করতে পারি , তাহলে, নিশ্চিতভাবেই এই জড় শরীর ত্যাগ করার পর... ভগবান বললেন , যঃ প্রাপ্তি, যিনি গমন করেন,... স মদ ভাবম যাতি (ভ.গী. ৮.৫) মদ-ভাবম ... তিনি ভগবৎ স্বরূপ কিংবা ভগবৎ প্রকৃতি প্রাপ্ত হন। বিভিন্ন ধরনের অধ্যাত্মবাদী রয়েছেন, যেমনটি আমরা আগে বর্ণনা করেছি। ব্রহ্মবাদী, পরমাত্মবাদী এবং ভক্ত। চিদাকাশে অথবা ব্রহ্মজ্যোতিতে চিন্ময় গ্রহাদি রয়েছে, অসংখ্য চিন্ময় গ্রহ, আমরা আগে বর্ণনা করেছি। এবং সেই চিন্ময় গ্রহাদির সংখ্যা জড় ব্রহ্মান্ডের সংখ্যার চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

জড় জগৎ হচ্ছে, একাংশেন স্থিত জগৎ (ভ.গী. ১০.৪২)। এটা সমগ্র সৃষ্টির এক চতুর্থাংশ প্রকাশ। চিৎজ্জগত হচ্ছে সৃষ্টির তিন চতুর্থাংশ এবং সৃষ্টির এই এক চতুর্থাংশে এই ব্রহ্মান্ডের মত লক্ষ লক্ষ ব্রহ্মান্ড রয়েছে, যা আমরা বর্তমান অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করে থাকি। এবং একটি ব্রহ্মান্ডে লক্ষ কোটি গ্রহ রয়েছে। সুতরাং এই জড় জগতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সূর্য, নক্ষত্র ও চন্দ্র রয়েছে , কিন্ত এই সমস্ত জড় জগত হচ্ছে ভগবত সৃষ্টির এক চতুর্থাংশ প্রকাশ। তিন চতুর্থাংশ প্রকাশ রয়েছে চিৎজ্জগতে। এখন, মদ ভাবম, যিনি পর ব্রহ্মে লীন হয়ে যেতে চান, তারা ভগবানের ব্রহ্ম জ্যোতিতে প্রবেশ করেন। মদ্‌ ভাবম্‌ বলতে এখানে সেই ব্রহ্ম জ্যোতি ও ব্রহ্ম জ্যোতিতে অবস্থিত চিদ গ্রহগুলি বোঝানো হয়েছে। এবং ভক্তরা, যারা ভগবানের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে চান, তারা বৈকুন্ঠ লোকে প্রবেশ করেন। অসংখ্য বৈকুন্ঠ লোক রয়েছে এবং পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ, নিজের পূর্ণ অংশ বিস্তারের মাধ্যমে চতুঃহস্ত ও বিভিন্ন নাম সমন্বিত নারায়ণ রূপ প্রকাশ করেন, প্রদ্যুম্ন, অনিরুদ্ধ এবং মাধব, গোবিন্দ... চতুঃহস্ত নারায়ণের অসংখ্য নাম রয়েছে। সেখানকার এক একটি গ্রহে, সেটিও মদ ভাবম, সেটিও চিন্ময় ধাম। তাই, যে কোনো অধ্যাত্মবাদী, জীবনের অন্তিম সময়ে, হয় ব্রহ্ম জ্যোতি স্মরণ করবেন অথবা পরমাত্মায় সমাধিস্থ হবেন অথবা পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী কৃষ্ণের স্মরণ করবেন, যেকোনো পদ্ধতিতে তিনি চিদাকাশে প্রবেশ করবেন। কিন্ত কেবলমাত্র ভক্তগণ , যারা পরম পুরুষ ভগবানের ব্যক্তিগত সঙ্গ লাভের জন্য ভক্তি পরায়ণ হয়েছে, তারা বৈকুন্ঠ লোক বা গোলোক বৃন্দাবনে প্রবেশ করেন। ভগবান বললেন, যঃ প্রাপ্তি স মদ ভাবং যাতি নাস্তত্র সংশয় (ভ.গী. ৮.৫)। এই ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই, কারো অবিশ্বাস থাকা উচিত নয়। এই হলো প্রশ্ন।

সারা জীবন তুমি ভগবদ গীতা অধ্যয়ন করছ , কিন্ত ভগবান যখন কিছু বলেন যেটা আমাদের ব্যক্তিগত ধারণায় মিল না হলে, তখন আমরা সেটি বর্জন করি। এটি ভগবদ গীতা অধ্যয়নের পন্থা নয়। ঠিক যেমন অর্জুন বললেন, সর্বম ইতং ঋতং মন্যে (ভ.গী. ১০.১৪) "তুমি যা বললে, আমি তাই বিশ্বাস করি " ঠিক সেইভাবে শ্রবণ কর, শ্রবণ করতে থাক। ভগবান বললেন যে মৃত্যুর সময়ে, যিনি তাঁর চিন্তা করেন, ব্রহ্ম, পরমাত্মা বা ভগবান রূপে, নিশ্চিতভাবেই তিনি চিদাকাশে গমন করেন এবং এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটি কারো অবিশ্বাস করা উচিত নয়। এবং পন্থাটি সাধারনভাবে ভগবদ গীতায় বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে একজন চিৎজ্জগত প্রবেশ করতে পারে। শুধুমাত্র মৃত্যুর সময়ে পরম পুরুষের চিন্তা করে। যেহেতু সাধারণ পন্থাটিও উল্লেখ করা হয়েছে :

যং যং বাপি স্মরণ
ভাবং ত্যাজত্যন্তে কলেবরম্‌
তং তমেবৈতি কৌন্তেয়
সদা তদ-ভাব-ভাবিত
(ভ.গী. ৮.৬)।