BN/Prabhupada 1077 - ভগবান পূর্ণ হওয়ায় তার নাম ও রূপে কোনো পার্থক্য নেই



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

ভগবান পূর্ণ, তার নাম ও তার নিজের মধ্যে পার্থক্য নেই। শ্রীমদ্ভাগবতম কে বলা হয় ভাষ্য অহং ব্রহ্ম্য সুত্রানাম। এটা বেদান্ত সূত্রের স্বাভাবিক ভাষ্য। তাই সমগ্র সাহিত্য, যদি আমরা আমাদের চিন্তা চেতনা উন্নত করি, তদ-ভাব-ভাবিত, সদা। সদা তদ-ভাব-ভাবিত (ভ.গী. ৮.৬), যিনি সদা সর্বদা নিয়োজিত... ঠিক যেমন জড় বাদীরা সবসময় জড় সাহিত্য অধ্যয়নে ব্যস্ত, যেমন, পত্র পত্রিকা , ম্যাগাজিন , গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি, এবং আরো অনেক বৈজ্ঞানিক কিংবা দার্শনিক সাহিত্য, এগুলো সবই মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত। ঠিক একই ভাবে আমরা যদি বৈদিক সাহিত্য অধ্যয়নের প্রবণতা গড়ে তুলি , যা ব্যাসদেব কৃপাবশত প্রদান করেছেন , তাহলে মৃত্যুর সময় অবশ্যই পরমেশ্বর ভগবানকে স্মরণ করা সম্ভব হবে। এটাই পরমেশ্বর ভগবান কর্তৃক প্রদর্শিত পন্থা। ঠিক পরামর্শ নয়, এটাই বাস্তবতা। নাস্তি অত্র সংশয় (ভ.গী. ৮.৫), এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তস্মাৎ, সেজন্য ভগবান বললেন, তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মাম অনুস্মর যুদ্ধ চ (ভ.গী. ৮.৭)। তিনি অর্জুনকে উপদেশ দিচ্ছেন, মাম অনুস্মর যুদ্ধ চ। তিনি এটা বলেন নি "তুমি তোমার বৃত্তি মূলক কর্তব্য কর্ম পরিত্যাগ করে শুধু আমাকে স্মরণ কর।" না। সেই উপদেশ দেওয়া হয়নি। ভগবান অবাস্তব কোন কিছু উপদেশ দেন না। এই জড় জগতে শরীর নির্বাহের জন্য কর্তব্য কর্ম করতেই হবে। বৃত্তিমূলক কর্তব্য কর্মকে চারটি বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছে : ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র। সমাজের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ভিন্নভাবে কর্তব্য কর্ম নির্বাহ করে থাকেন, এবং সমাজের শাসক সম্প্রদায়, তাদের ও কর্তব্য কর্ম ভিন্ন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, তাদের ক্রিয়া ও ভিন্ন , এবং শ্রমিক সম্প্রদায়, তাদের কর্ম ও ভিন্ন। মানব সমাজে, শ্রমিক হিসেবে অথবা ব্যবসায়ী, কিংবা রাজনীতিবিদ প্রশাসক হিসেবে , অথবা সাহিত্যিক বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় রত উচ্চতম বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় হিসেবে, প্রত্যেকেই পেশাগত কর্তব্য কর্মে নিয়োজিত এবং অস্তিত্বের সংগ্রামে প্রত্যেককেই কর্তব্য কর্ম করতেই হয়।

সেজন্য ভগবান পরামর্শ দিলেন, "তোমার পেশগত বৃত্তি পরিত্যাগ করতে হবে না, কিন্ত একই সময়ে তুমি আমাকে স্মরণ কর" । মাম অনুস্মর (ভ.গী. ৮.৭)। এই পন্থা অবলম্বন করলে তুমি মৃত্যু কালেও আমাকে স্মরণ করতে পারবে। যদি তুমি সবসময় আমাকে স্মরণ করার এই অভ্যাস না কর, তোমার অস্তিত্বের লড়াইয়ের সাথে সাথে , তাহলে এটা সম্ভব নয়। এটা সম্ভব নয়। চৈতন্য মহাপ্রভু ও একই উপদেশ দিচ্ছেন, কীর্তনীয়ঃ সদা হরি (চৈ. চ. আদি ১৭.৩১)। কীর্তনীয়ঃ সদা। প্রত্যেকেরই সদা সর্বদা ভগবানের নাম জপ করা উচিত। ভগবানের নাম ও ভগবান ভিন্ন নন। তাই এখানে অর্জুনের প্রতি ভগবানের উপদেশ যে মাম অনুস্মর (ভ.গী.৮.৭), "তুমি আমাকে স্মরণ কর" এবং চৈতন্য মহাপ্রভু ও নির্দেশ দিচ্ছেন "তুমি সর্বদা কৃষ্ণ নাম জপ কর।" কৃষ্ণ এখানে বলছেন, "তুমি সর্বদা আমাকে স্মরণ কর" অথবা তুমি কৃষ্ণ স্মরণ কর, এবং চৈতন্য মহাপ্রভু বলছেন, "তুমি সর্বদা কৃষ্ণ নাম জপ কর।" এখানে কোন পার্থক্য নেই কারণ কৃষ্ণ ও কৃষ্ণ নাম অভিন্ন। পরম সত্বায় এক বস্তুর সাথে অন্য বস্তুর ভেদ নেই। এই হলো পরম সত্য। ভগবান পরম পুরুষ হওয়ায় তাঁর নাম ও রূপের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই আমাদের সেভাবে অনুশীলন করতে হবে। তস্মাৎ সর্বেসু কালেসু (ভ.গী. ৮.৭)। সবসময়, চব্বিশ ঘন্টা। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কর্তব্য কর্ম এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আমরা চব্বিশ ঘন্টা কৃষ্ণ স্মরণ করতে পারি। এটা কিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, এটি সম্ভব , এটি সম্ভব। পূর্বতন আচার্য বৃন্দ এই ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এবং সেই দৃষ্টান্তটি কি? বলা হয় যে, একজন মহিলা যিনি পরপুরুষের প্রতি আসক্ত, যদিও তার স্বামী রয়েছে, তথাপিও তিনি অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত। এবং এই আসক্তি অত্যন্ত প্রবল। এটাকে বলা হয় পরকিয়া রস। পুরুষ বা মহিলা, যার ক্ষেত্রেই হোক না কেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রী ব্যতিত অন্য কোন রমনীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, অথবা কোন স্ত্রী তার স্বামী ব্যতিত পর পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়, এই আসক্তি অত্যন্ত প্রবল হয়। এটা অত্যন্ত প্রবল আসক্তি। পূর্বতন আচার্যবৃন্দ তাই ভ্রষ্টা নারীর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন যে অন্য স্ত্রীলোকের স্বামীর প্রতি আসক্ত, যে সবসময় পর পুরুষের চিন্তা করে, একইসময়ে, তার স্বামীকে দেখায় যে সে পারিবারিক কাজে অনেক ব্যস্ত। যাতে তার স্বামী তার চরিত্রে কোন সন্দেহ প্রকাশ না করে। যেহেতু সে সবসময় রাত্রিবেলায় তার প্রেমিকের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে মনোনিবেশ করে থাকে, পারিবারিক গৃহকর্মাদী অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সত্বেও, একইভাবে, যে কেউ পরম স্বামী , শ্রী কৃষ্ণের স্মরণ করতে পারে, সবসময়, তার জড় জাগতিক কর্তব্য কর্ম পূর্ণ নিষ্ঠার সহিত পালন করা সত্বেও। এটা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন প্রবল নিষ্ঠা ও ভালবাসা।