BN/Prabhupada 1059 - পরমেশ্বর ভগবানের সহিত সকলের একটি সুনিদিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

যে কেউ তৎক্ষণাৎ পরমেশ্বর ভগবানের ভক্তে পরিণত হতে পারে, পরমেশ্বর ভগবানের সহিতও তাঁর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এটি একটি অত্যন্ত বিশদ বিষয়, কিন্তু সংক্ষেপে বলা যায় যে, ভক্ত ভগবানের সঙ্গে পাঁচটি সম্পর্কের যে কোন একটির দ্বারা যু্ক্ত থাকেন। নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ভক্ত হতে পারেন(শান্ত) সক্রিয় ভাবে ভক্ত হতে পারেন(দাস্য) বন্ধু ভাবে ভক্ত হতে পারেন(সখ্য) অভিভাবক রূপে ভক্ত হতে পারেন(বাৎসল্য) দাম্পত্য প্রেমিকরূপে ভক্ত হতে পারেন(মাধুর্য)

অর্জুনের সঙ্গে ভগবানের সম্পর্কের রূপ ছিল সখ্য। পরমেশ্বর ভগবান বন্ধু হতে পারেন। অবশ্যই এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং পার্থিব জগতের বন্ধুত্বের, বিস্তর তফাৎ। এই সম্পর্ক হচ্ছে অপ্রাকৃত... এমন নয় যে এই সম্পর্ক ভগবানের সাথে সবার থাকবে পরমেশ্বর ভগবানের সহিত সকলের একটি সুনিদিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সুনিদিষ্ট সম্পর্কের প্রকাশ হয় ভক্তিযোগের পূর্ণতার মাধ্যমে। তবে আমাদের বর্তমান অবস্থায়, আমরা কেবল ভগবানকেই ভুলে যাইনি, সেই সঙ্গে ভুলে গেছি পরমেশ্বর ভগবানের সাথে চিরন্তন সম্পর্কের কথা। লক্ষ কোটি জীবের মধ্যে প্রতিটি জীবেরই, ভগবানের সঙ্গে প্রতিটি জীবের কোন না কোন রকমের শাশ্বত সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ক হচ্ছে জীবের স্বরূপ। স্বরূপ। এবং ভক্তিযোগের মাধ্যমে এই স্বরূপের প্রকাশ হয় এবং তাকে বলা হয় জীবের স্বরূপ সিদ্ধি, সিদ্ধির স্বাভাবিক অবস্থান। সুতরাং অর্জুন ছিলেন ভগবানের ভক্ত এবং তাঁর সাথে ভগবানের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

তাই ভগবদ্গীতা অর্জুনকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এবং অর্জুন তা কিভাবে গ্রহণ করেছে? উল্লেখ্য যে। অর্জুন কিভাবে ভগবদ্গীতা গ্রহণ করেছিলেন, ভগবদ্গীতার দশম অধ্যায়ে তা বর্ণনা করা হয়েছে। ঠিক যেমনঃ

অর্জুন উবাচ-

পরং ব্রহ্ম পরং ধাম
পবিত্রং পরমং ভবান্‌।
পুরুষং শাশ্বতং দিব্যম
আদিদেবমজং বিভুম্‌।।
(ভ: গী: ১০/১২)
আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে ‍
দেবর্ষির্নারদস্তথা।
অসিত দেবলো ব্যাসঃ
স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।
(ভ: গী: ১০/১৩)
সর্বমেতদ্‌ ঋতং মন্যে
যন্মাং বদসি কেশব।
ন হি তে ভগবন্‌ ব্যক্তিং
বিদুর্দেবা ন দানবাঃ।।
(ভ: গী: ১০/১৪)

এখন, অর্জুন বলেছেন, পরম পুরুষোত্তম ভগবানের কাছে থেকে ভগবদ্গীতা শোনার পর, তিনি মেনে নিয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরং ব্রহ্ম, পরব্রহ্ম। ব্রহ্ম। প্রতিটি জীবই ব্রহ্ম, কিন্তু পরম জীব অথবা পরম পুরুষোত্তম ভগবান হচ্ছেন পরব্রহ্ম। এবং পরং ধাম। পর্ং ধাম কথাটির অর্থ হচ্ছে তিনি সব কিছুর পরম আশ্রয়। এবং পবিত্রম মানে হচ্ছেন বিশুদ্ধ অর্থাৎ জড় জগতের কোন রকম কলুষ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। এবং তাঁকে পুরুষম বলে সম্বোধন করা হয়েছে। পুরুষম কথাটির অর্থ হচ্ছে তিনি পরম ভোক্তা। শাশ্বতম্‌, শাশ্বতম্‌ মানে সনাতন, দিব্যম্‌, অপ্রাকৃত; দেবম্‌, পরম পুরুষ ভগবান; অজম্‌, জন্মরহিত; বিভুম্‌, সর্বশ্রেষ্ঠ।

এখন কেউ মনে করতে পারেন যে, অর্জুন যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু ছিলেন, তাই তিনি ভাবোচ্ছ্বসিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্তন করেছেন। কিন্তু ভগবদ্গীতার পাঠকের মন থেকে সেই সন্দেহ দূর করার জন্য অর্জুন, সে তাঁর প্রস্তাব প্রতিষ্ঠা করেছেন ভগবৎ-তত্ত্ববিদ্‌ মহাজনের দ্বারা। তিনি বলেছেন যে ভগবান শ্রীকৃ্ষ্ণকে পরম পুরুষোত্তম ভগবান হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে শুধুমাত্র অর্জুন, তাঁর নিজের দ্বারা নয়, কিন্তু ভগবৎ-তত্ত্ববিদ্‌ মহাজনেরা যেমন-নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাসাদি স্বীকার করেছেন। বৈদিক জ্ঞান বিতরণকারী এইসকল ভগবৎ-তত্ত্ববিদেরা হলো মহাজন। এই সমস্ত মহাপুরুষদের আচার্যেরা স্বীকার করেছেন। তাই অর্জুন বলেছেন যে, ”আমাকে আপনি যা কিছু বলেছেন আজ পর্যন্ত, আমি সব নির্ভুল বলে গ্রহণ করছি।”